শীগ্রই দেশের ২ লাখ সমবায় সমিতির ডিজিটাল ডাটাবেজ
বর্তমানে দেশের প্রায় ৪০ ভাগ সমবায় সমিতি অকাযর্কর হয়ে পড়ায় মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য দেশের প্রায় দুই লাখ সমবায় সমিতির পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
এ কাযর্ক্রম স্থানীয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সফটওয়্যার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এজন্য থাকবে আধুনিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, সমবায় অধিদফতরের আইসিটি ও ই-সিটিজেন সার্ভিস উন্নয়ন-শীর্ষক চলমান প্রকল্পের আওতায় এসব কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ ২০১১ সালের মে মাস থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই লাখ সমবায় সমিতিকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ডাটাবেজের আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন পযর্ন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যারের জন্য সমবায় সমিতির দুই ধরনের তথ্য (প্রাথমিক ও বাৎসরিক) সংগ্রহ করা হবে। এজন্য সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে ও প্রকল্পের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা ডাটা এন্ট্রির দায়িত্ব পালন করবেন।
এজন্য ডাটা এন্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১৮০ জনের জন্য অাপগ্রেডেশন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ও সমবায় অধিদফতরের কর্তকর্তা ড. মুহম্মদ মেহেদী হাসান জানান, দেশের প্রায় দুই লাখ সমবায় সমিতির পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্য এন্ট্রির কাজ হয়েছে ৮০ ভাগ। তবে বাৎসরিকভাবে এখনও অনেক কাজ বাকি। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, সফটওয়্যারটি ব্যবহারের পর মাঠ পর্যায়ের চাহিদা অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে বলেও তিনি জানান।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সমবায় অধিদফতর। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। পরে অনুমোদিত মূল ডিপিপির হ্রাস বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকায়।
তবে প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট খাতে মূল বরাদ্দকৃত ৯৬ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইন্টারনেট খাতে বরাদ্দ কম রাখা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জানান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়নের সময় মোট ৭০টি ডাটা এন্ট্রি পয়েন্টের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ চার্জ বাবদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের উদ্ধৃত দরের মধ্যে ডাটা ও ইন্টারনেট সেবা দিতে সম্মত হওয়ায় এ খাতে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
এছাড়া, ১৮০ জনের অাপগ্রেডেশন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে ২৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এটি সরকারের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ। এছাড়া প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে সমবায় সেক্টরে ই-সার্ভিস প্রদান ও ডিজিটাল অফিস ব্যবস্থাপনা করা। সেই লক্ষ্যে দুই হাজার ৯২৫টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া দেশের সব সমবায় সমিতির যাবতীয় তথ্য ডাটাবেজ আকারে সংরক্ষণ ও নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। এর পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত ৬৯ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় সমবায় অধিদফতরে একটি ডায়নামিক ওয়েবপোর্টাল চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, এজন্য এক হাজার ১০ জন সমবায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সমবায়ীদের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমছে
২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৭০১ সিসি থেকে ২৭৫০ সিসি পর্যন্ত প্রাইভেট কার, সবধরনের প্রসাধনী, সুগন্ধি, সাবান, মোবাইল সিম কার্ড, টুথ ব্রাশ, আসবাবপত্র, দরজা-জানালা, এ্যালুমিনিয়াম স্যানেটরি ওয়্যারের দাম কমছে। এছাড়া টু স্ট্রোক ও ফোর স্ট্রোক বিশিষ্ট অটো রিক্সা, থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, ফিল্টার, ইমিটিয়েশন জুয়েলারি, অমসৃণ হীরা, ট্রাক স্যুট, গার্মেণ্টস সামগ্রী, ওভেন, ফেব্রিক্স ও রেশম বস্ত্রের দাম কমছে। পটেটো চিপস, চকলেট, হিমায়িত মাছ, কাটা ছড়ানো মাছ, মাখন, দুগ্ধজাত চর্বি ও তেল, ডেইরি প্রোডাক্ট, সুইটি বিস্কুট, মেয়েদের ব্রেসিয়ার, রুমাল, শাল, স্কার্ফ, গ্লাভস, মাফলারসহ প্রায় ১৪৮টি পণ্যের দাম কমবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যের উপর থেকে সম্পূরক শুল্ক সর্বনিন্ম ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
লিজ বন্ধ হচ্ছে বিআরটিসি বাসের
রক্ষাণাবেক্ষণ ঠিকমতো হয়না বলে বিআরটিসি বাসের লিজ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার সকালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সড়ক পরিবহনে জটিলতা নিরসন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ তথ্য দেন।
বৈঠকের পর যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, লিজ দেওয়ার পর বিআরটিসি বাসের রক্ষাণাবেক্ষণ ঠিকমতো হয়না। এতে বেসরকারি মালিক পক্ষের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে বিআরটিসি বাসের লিজ বন্ধ করার ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।
যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ে যদি নতুন বাসরুট চালু করতে হয়, সেক্ষেত্রে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বর্তমানে চালুকৃত রুটে যেন ওভারল্যাপিং না হয়, সে ব্যাপারে বিআরটিসি আগামী সপ্তাহে বৈঠক করে সমস্যা সমাধান করবে।
জেলা ও মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান যোগাযোগ মন্ত্রী।
বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মূল পদ্মাসেতু নির্মাণের কার্যাদেশ অনুমোদন
হালাল পতিতালয়!
প্রিপেইড মিটার ক্রয়ে পিডিবিতে দুর্নীতি-লুটপাটের পাঁয়তারা
পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোতে ব্যায় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা
সূত্র: যুগান্তর
বিজেপি সরকার: ছিটমহলবাসীর মাঝে সংশয়
ভারতীয় লোকসভার ১৬তম নির্বাচনে বিজেপির জয় নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু করছেন লালমনিরহাটের ছিটমহলবাসী। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন যখন কংগ্রেসের ঘোষণার অপেক্ষায় ঠিক তখনই রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ভারতের বৃহৎ এ দলটি ছিটকে পড়ায় সংশয় দেখা দিয়েছে দু’দেশের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি নিয়ে। তাই এ চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ছিটমহলবাসীকে, দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকায় এভাবেই ছিটমহলবাসীর যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা তুলে ধরেছে। ছিটমহলবাসী মনে করছেন, এ চুক্তি বাস্তবায়ন কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে যত সহজ হতো, বিজেপি ক্ষমতায় আসায় তত সহজ হবে না। কেউ কেউ বলছেন সহজেই বিজেপি ছিটমহল চুক্তিতে এগিয়ে আসবে না। এলেও আবার নতুন করে ভাবতে হবে, যা অনেক সময়ের ব্যাপার। আবার অনেকেই বলছেন ভিন্ন কথা, বিজেপি আগের অবস্থান থেকে নিজের স্বার্থে অনেকটা সরে আসবে। বিজেপি এ গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাদের পরিকল্পনায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। যে কারণে ছিটমহলের অনেকেই বিশ্বাস করেন, কংগ্রেস যেখানে এ চুক্তিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিজেপি এ চুক্তি বাস্তবায়ন করে রাজনৈতিক সফলতা ঘরে তুলবে। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আংগরপোতা বঙ্গেরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, পুরাতন সরকার যা পারেনি, নতুন সরকার তা করে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। আর তা না করলে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তফাৎ কি থাকল? ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে কংগ্রেস সরকার যতটা পথ এগিয়ে নিয়েছেন নতুন বিজেপি সরকার তা আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়ন করে দু’দেশের ছিটমহলবাসীর মুখে হাসি ফুটাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিটমহলবাসীর। উল্লেখ্য, ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ৫১টি ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ৫১টি ছিটমহলে জমির পরিমাণ ৭ হাজার ২১ একর, লোকসংখ্যা ৩৮ হাজারও বেশি। অন্যদিকে ১১১টি ছিটমহলে ১৭ হাজার ১ শত ৪৯ একর জমি, লোকসংখ্যা ৬৫ হাজারের বেশি রয়েছে।
পানি সঙ্কটে রাজধানীবাসী, যাও পাচ্ছে তাও ব্যবহারযোগ্য নয়
তীব্র তাপদাহে রাজধানীসহ সারাদেশের জনজীবন যেন দুর্ভিসহ হয়ে ওঠেছে। সেই সাথে খোদ রাজধানীতে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সঙ্কট। যদিও বা পানি পাওয়া যায় তাও আবার ব্যবহারযোগ্য নয়। পানিতে রয়েছে দুর্গন্ধ, রঙ হলুদ, কোথাও কোথাও ময়লা পানির সঙ্গে আসছে পোকাও। জানা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, দক্ষিণ মৈশুণ্ডী, যাত্রাবাড়ী ও নতুন ঢাকার রাজাবাজার, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ওয়াসার পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সে পানি ব্যবহারযোগ্য নয়। পানিতে রয়েছে দুর্গন্ধ, রঙ হলুদ, কোথাও কোথাও ময়লা পানির সঙ্গে আসছে পোকা। প্রায় নয় মাস ধরে চলছে পানির এ কষ্ট। বিশেষ করে রান্না, গোসল, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন কাজে ভীষণ সমস্যায় পড়েছে ওইসব এলাকাবাসী। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ নামক একটি সংগঠন অভিযোগ করেছে, রাজধানীবাসীর জন্য ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পানের অযোগ্য, জীবাণুযুক্ত ও দুর্গন্ধময়। জানা গেছে, বর্তমানে তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। এর ওপর লোডশেডিং, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেড়ে যাওয়ায় পাম্পগুলোয় পানি উত্তোলনেও সমস্যা হচ্ছে। গেণ্ডারিয়া থানার পাশে একটি পানির পাম্প বসানোর জন্য এলাকাবাসী ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদনপত্র দিয়েছে। তাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদেরও সুপারিশ রয়েছে। দক্ষিণ মৈশুণ্ডীতেও রয়েছে পানির কষ্ট। পানি সরবরাহ সেখানে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ। কল ছাড়লেই ভেসে ওঠে পোকা ও ময়লা। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ঢাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ছিল ২৪৮ থেকে ২৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হতো ২০০ কোটি লিটার। ওই সময় ৫০ কোটি লিটার পানির ঘাটতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে পানির সে ঘাটতি পূরণ করেছে ঢাকা ওয়াসা। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাম্পে পানিও কম উঠছে বলেও জানা যায়।
সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ
রাজধানী থেকে সরাতে হবে ৭৫০ পোশাক কারখানা
রাজধানীতে ভাড়া করা ভবনে ১ হাজার ৫০০টি পোষাক কারখানার মধ্যে ৭৫০টিরও বেশি কারখানা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা। ত্রুটিপূর্ণ এসব কারখানা রাজধানী থেকে সরাতে হবে বলে মনে করছে সরকারের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। জানা গেছে, রাজধানীতে ভাড়া করা ভবনে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোর অধিকাংশেরই রয়েছে স্থাপত্য ও নকশাজনিত ত্রুটি। কর্মপরিবেশ ও শ্রম নিরাপত্তা জোরদার মূল্যায়ন কার্যক্রমেও এসব ত্রুটি বেরিয়ে আসছে। এছাড়া এরই মধ্যে উৎপাদন স্থগিত হয়ে গেছে এক ডজনেরও বেশি কারখানার। ভাড়া করা ভবনে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এমন কারখানাগুলোর মধ্যে আছে মিরপুরের মোল্লা টাওয়ারের সফটেক্স, ফেম ও ডায়মন্ড। এছাড়া একই এলাকায় রয়েছে ফোর উইংস, অ্যাটিউন ও ন্যাচারাল গার্মেন্টস। এ কারখানাগুলোর সব উদ্যোক্তাই বাণিজ্যিক ভবনের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কারখানা গড়ে তুলেছেন। বিদ্যমান মূল্যায়ন কার্যক্রমে স্থাপত্য ত্রুটি ধরা পড়ায় এসব কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আরও জানা যায়, দুটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগে এরই মধ্যে ১২টির বেশি কারখানা ভবনের ত্রুটি চিহ্নিত করা গেছে। পুরো মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষ হলে বোঝা যাবে ঠিক কতটি কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। তবে সরকারের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সাড়ে ৭০০ পোশাক কারখানাকে পরিকল্পিত স্থানে চলে যেতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাবে, দেশে সক্রিয় কারখানা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬০০টি। এর প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০টি গড়ে উঠেছে শেয়ার্ড ভবনে। সরকারের প্রাথমিক হিসাবে, এই ১ হাজার ৫০০ কারখানার ৫০ শতাংশ সরিয়ে নিতে হবে। আর এ কারখানাগুলোর মধ্যে যেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ভবনে স্থাপিত, তা চিহ্নিত হবে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর। প্রসঙ্গত, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকার ২৬টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসহ আছে ইউরোপীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রায় ১৫০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বিদেশী প্রকৌশলীদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রায় ১৮০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। সূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা
বাংলাদেশে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ আফ্রিকার দরিদ্র দেশের চেয়েও কম!!!
একটি দেশের শিক্ষা খাতে মোট জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। যা ২০০০ সালে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সম্মতিতে স্বাক্ষর হয় ‘ডাকার ঘোষণা’। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় আয়ের ২ শতাংশের সামান্য বেশি, অর্থাত্ বাজেটের ১১ শতাংশের কাছাকাছি। যা আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশের চেয়েও কম। জানা যায়, আফ্রিকার তানজানিয়ায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় মোট বাজেটের ২৬ শতাংশ। আর লেসোথোয় এ বরাদ্দ ২৪ শতাংশ, বুরুন্ডিতে ২২, টোগোয় ১৭ ও উগান্ডায় ১৬ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছর বাংলাদেশে মোট বাজেটের ১১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয় শিক্ষা খাতে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ মোট জাতীয় আয়ের হিসাবে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার শিক্ষায় আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চলতি অর্থবছর জাতীয় বাজেটের সাড়ে ১৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয় শিক্ষা খাতে। এদিকে দেশে শিক্ষা খাতে বাজেটের মাত্র ১১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হলেও এর বড় অংশ চলে যায় অনুন্নয়ন খাতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শিক্ষায় মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা শিক্ষার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়, যা বাজেটের ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বাকি অংশ বরাদ্দ দেয়া হয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খাতেই। ২০১২-১৩ অর্থবছর শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ২০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। আর ২০১১-১২ অর্থবছর শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয় ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সূত্র : বণিক বার্তা
ভেজাল খাদ্য এবং আমাদের সচেতনতা প্রসঙ্গে
আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার গ্রহণ করি তার মধ্যে রয়েছে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রক্রিয়াও এখন ব্যতিক্রমধর্মী। ভোক্তা সাধারণের চোখে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ভোজাল মেশানো যায় সেদিকে বেশি নজর রাখছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। জমি থেকে ফসল তোলা থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য প্রস্তুত ফ্যাক্টরীগুলোতেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজালেরও ধরণ রয়েছে ভিন্ন। যে খাদ্যে যে ধরণের ভেজাল মেশালে সহজে চোখে ধরা পড়ার কোনো সুযোগ নেই সেদিকেই নজর রাখা হচ্ছে চক্রন্তিকারীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখে ফাঁকি দিয়েই চলছে এসব কাজ। শুঁটকি আড়তে প্রকাশ্যেই কীটনাশক মেশানো হচ্ছে। মাছে ফরমালিনের খবর এখন সকলের জানা রয়েছে। অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যে দেয়া হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। ভোজাল খাদ্য থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য সরকারী উদ্যোগ থাকলেও তা কাঙ্খিত নয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। কোন কোন খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে : বেকারি পন্যে দুনিয়ার ভেজাল। ফলে, মাছে ফরমালিন। অপরিপক্ক টমেটো হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। গরুকে নিষিদ্ধ ঔষধ খাইয়ে মোটা করা হচ্ছে। সেগুলো মানব স্বাস্থের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর! পচনরোধে বিষাক্ত ফরমালিন, তাজা দেখাতে মাছে রেড অক্সাইড, ফলমূল ও শাকসব্জিতে কার্বাইড মিশানো হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানব দেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। মানুষের লিভার, কিডনি নষ্ট করে ফেলে। মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অসুস্থ হয়ে নিতে হয় হাসপাতালে। যে দেশে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে রোগ বালাই যেন গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো। বিকল্পহীন এ সব ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম ক্রনিক রোগে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আর কত ভেজাল খাব? কথায় বলে, মাছে-ভাতে বাঙালি। সেই মাছ-ভাত এখন আর নিরাপদ নেই। খাদ্যে ভেজাল। এ এক নীরব ঘাতক। ভেজাল খাবারে দেশ সয়লাব। কী খাব? নিরাপদ কোনো খাবার আদৌ কী আছে? মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, মুড়িতে ইউরিয়া-হাইড্রোজ, পানিতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই। ভেজাল খাবার খেয়ে আমরা জাতিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি, নতুন প্রজন্মকে মেধাহীন পঙ্গু জীবনের মতো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। কোথায় নেই ভেজাল? হাত বাড়িয়ে যা কিছু খাচ্ছি সবকিছুতেই ভেজাল। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নকল পণ্য। সেই পণ্য চলে আসছে বাজারে। আসল পণ্যের হুবহু নকল সিল-মনোগ্রাম, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়ে নকল অনুমোদনপত্র ছাপা হয়ে যাচ্ছে প্যাকেটের গায়ে। নকলের দাপটে এখন আসল পণ্য চেনাই দায় হয়ে পড়েছে। বাজার সয়লাব হয়ে গেছে এসব নকল পণ্যে। বাজারে ফ্রুট জুস, চিপস, ছোটদের মন রক্ষাকারী বিভিন্ন ধরনের যে শরবত পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই নকল। অসাধু ব্যবসায়ীরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে খাবারে অবাধে মিশিয়ে যাচ্ছে ফরমালিন। শুধু মাছ নয়, দুধ, মিষ্টি, সেমাই, জুস, শরবত, ফল, ভোজ্যতেল, মসলা, মুড়ি ও ইফতারের বিভিন্ন মুখরোচক উপাদান, জিলাপিসহ ফল ও শাক-সবজির মধ্যেও এখন মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত এই কেমিক্যাল। ফরমালিন মেশানো খাবার ধরা পড়লে জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে, তারপরও থেমে নেই তারা। জীবন রক্ষাকারী খাবার স্যালাইন নকল তৈরি হচ্ছে। এমনকি খেজুরেও ফরমালিন দেয়া হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে কোনো ধরনের ল্যাবরেটরি ও রসায়নবিদ ছাড়াই স্যালাইনের মতো অতি জরুরি একটি ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি দুধেও দেয়া হচ্ছে ফরমালিন। শাকসবজিতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। কাউন ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে মসলা তৈরি করা হয়। ঘাসের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে নামি-দামী ব্র্যান্ডের মসলা তৈরি করে একটি চক্র। ছোলা ও মুড়ি সাদা করতে মেশানো হয় হাইড্রোজ। কৃত্রিম রং মিশিয়ে নকল ঘি বানানো হচ্ছে। এমনকি শিশুদের বিকল্প খাদ্যেও মেলামিন (ভেজাল) মেশানো হচ্ছে। আম, আনারস ও টমেটোতে কেমিক্যাল মিশিয়ে হলুদ করা হচ্ছে। এমনিভাবে দেশের প্রতিটি খাবারেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল হিসেবে জুতার কালি ও কাপড়ের রংও উদ্ধার করেছে বিভিন্ন অভিযানের সময় মোবাইল কোর্ট। খাবারে ফরমালিন, বস্ত্রকলের বিষাক্ত রং এবং ইউরিয়া সার মেশানো হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আম, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, জাম, জামরুল, তরমুজ, বাঙ্গি, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণত ফলমূলের উজ্জ্বল রং বা নজরকাড়া রূপ মানুষকে আকৃষ্ট করে। এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানিরা এসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশাচ্ছেন। সমপ্রতিকালে যেসব খাবারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে তা হলো-হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নাকরা পচা ও বাসি খাবার, ফাস্টফুড, বিষাক্ত সাইক্লোমেট দিয়ে তৈরি টোস্ট বিস্কুট, বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল (আম, কলা, পেঁপে, আনারস ও অন্যান্য ফল), বিষাক্ত উপকরণ দিয়ে তৈরি রুটি, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, ভেজাল গম যা পশুর খাবার যোগ্যও নয়, ক্ষতিকর রং দেয়া ডিম, মেয়াদোত্তীর্ণ আইসক্রিম, বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন দ্রব্য, ডিডিটি দেয়া শুটকি, ডিডিটি দেয়া চাল, ক্ষতিকর রং দেয়া সবজি, মবিল দিয়ে ভাজা চানাচুর, ফরমালিন দেয়া মাছ, ক্ষতিকর রং দেয়া ডাল, ভেজালমিশ্রিত সয়াবিন তেল, ভেজাল মিশ্রিত সরিষার তেল, রং ও ভেজাল মেশানো ঘি, পামওয়েল মিশ্রিুত কনডেন্সড মিল্ক, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাকেটজাত জুস, মিনারেল ওয়াটার, মরা মুরগির মাংসে। ব্যবসায়ীরা খাবারে সাধারণত যেসব নিম্নানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে আর্সেনিক তৈরি হয়। আর্সেনিক হলো সেঁকো বিষ। সেই বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানব শরীরে প্রবেশ করে। বাজারে বিস্কুট, মিষ্টি, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস, কেক এবং রেস্তোরাঁয় রান্নাকরা খাবারের অধিকাংশই থাকে স্বাদহীন। খেয়ে কোনো তৃপ্তি পাওয়া যায় না। এসব খাবার শরীরের জন্যও নিরাপদ নয়। শাক-সবজি, মাছ ও মাংসে ভেজাল তো নিত্যদিন রয়েছেই। ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া কৃত্রিমভাবে প্রজননের মাধ্যমে বাজারজাত মাছ, মাংস আমরা সব সময় খাই। মাছকে ইউরিয়া সার খাওয়ানো হয় এবং গরুর বর্জ্য, চামড়া আগুনে পুড়িয়ে এক প্রকার খাদ্য বানিয়েও মাছকে খাওয়ানো হয়, এমনকি ফার্মের বয়লার মুরগির বর্জ্য খাওয়ানো হয়। গরুকে বলিষ্ঠ করার জন্য আখের গুড়ের তৈরির বর্জ্য (রাব) যা এলকোহলসমৃদ্ধ এবং এমনকি ইউরিয়া মিশ্রিত ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাবার যে গরু খায় সে গরুর মাংস আমরা খাই। ভোজাল খাদ্যে মানব দেহে যা ঘটছে : ভেজাল ও বিষ গ্রহণের ফলে মানবদেহে নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন ক্যান্সার, লিভার রোগ, কিডনি রোগ এবং রক্ত শূন্যতা ইত্যাদি নানা রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সাধারণত কাঁচা কলাকে ইথাইলিন গ্যাস দ্বারা পাকানো হয়। অধিক মুনাফালোভী কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী কাঁচা মৌসুমী ফল যেমন আম, কলা, পেঁপে, নাশপাতি, কুল ও আপেলকে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামক বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকায়। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইড একটি সহজলভ্য ও তুলনামূলকভাবে সস্তা কেমিক্যাল। কমপাউন্ড যা শিল্প-কলকারখানায় সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে। দেখতে গাঢ় দূসর রং। অনেকটা রসুনের মতো গন্ধ ছড়ায়। এটা সাধারণত স্টিল জাতীয় পদার্থের ওয়েল্ডিং কাজে ব্যবহৃত হয়। ব্যবসায়ীরা আম কিংবা অন্যান্য ফলকে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ছোট ছোট খোলা পাত্রে মিশিয়ে সারি সারি করে বসিয়ে তারপর পলিথিন বিছিয়ে দেয়। এ বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাসে জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এলে এসিটাইলিন গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস ফল পাকাতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম কার্বাইডে আর্সেনিক ও ফসফরাস জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এসিটাইলিন গ্যাস স্নায়ুতন্ত্র তথা ব্রেইনের অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। আর্সেনিক, চর্ম, লিভার, কিডনি, ফুসফুসসহ মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। স্বল্পমেয়াদি রোগের উপসর্গগুলো: ১. চোখ ও চামড়ার সংস্পর্শে এলে জ্বালাপোড়া এবং চোখের অন্ধত্ব এবং চামড়ায় ঘা হতে পারে। ২. শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ৩. খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করলে মুখে ঘা হতে পারে। ৪. অতি মাত্রায় গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। ৫. এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব যেমন কফ, কাশি ও এজমা। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল চেনার উপায়: ১. উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আম কাটার পর চামড়ার ঠিক নিচে ফলের অংশ কাঁচা পাওয়া যাবে। যদিও চামড়াটি পাকা রংয়ের বর্ণ ধারণ করেছিল। ২. যদি ঝুঁড়িতে বা দোকানে সবগুলো ফল একই সময়ে একইরকম পাকা দেখা যায় এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলের চামড়ায় আঁচিল বা তিলের মতো রং দেখা যায়। ৩. প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যে ফল পাকে তাতে মাছি বসবে কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো হলে সে ফলে মাছি বসবে না। ৪. প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়া উঠানোর পর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গাঢ় নীল অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে। কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো ফলে এই আয়োডিনের রং অপরিবর্তিত থাকে। আমাদের করণীয়: ফল খাওয়ার আগে কয়েক মিনিট পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। মৌসুমের আগে বাজারে যে পাকা ফলগুলো আসে সেগুলো ধরেই নিতে হবে এগুলো কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো হয়েছে। যখন আম এবং আপেল জাতীয় ফল খাবেন তখন এগুলো টুকরো টুকরো করে খাবেন। পুরো ফল কামড়ে না খাওয়াই ভালো। আমাদের সবার দায়িত্ব জনগণকে সচেতন করে তোলা। ফল উৎপাদনকারী কৃষক, ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের ফল পাকানোর নিরাপদ প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া। যেমন : আমের ক্ষেত্রে সারি সারি করে আম খড়ের গাদায় বসিয়ে রাখলে আম পেকে যাবে। তাছাড়া গাছ থেকে ফলগুলো পুরোপরিভাবে পাকার পর আম পাড়া ভালো। ফলের পেশায় যারা নিযুক্ত রয়েছে তাদের ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারের ক্ষতির দিকগুলো শিক্ষা দিতে হবে। যারা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা করে এবং মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয় তাদের আইনের মাধ্যমে শাস্তি ও অর্থদন্ডের বিধান করা একান্ত প্রয়োজন, যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত রয়েছে। উপরে উল্লেখিত সবধরনের ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে আছি। তাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যহানি, মেধা ও মননশীলতা কতখানি বিঘ্নিত হবে এবং হচ্ছে এদিকে নজর দিতে হবে। এ বিপুল জনগোষ্ঠিকে রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখতে সরকারকে বিশুদ্ধ খাদ্য আইন বাস্তবায়নে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ আইন শতভাগ বাস্তবায়ন করলে সরকার বাহবা পাবে বাড়বে জনপ্রিয়তা। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মাঝেমধ্যে তৎপর দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারমাধ্যমকে বেশি করে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসনের উয়িং গুলোকে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১ জুন আদালতের এক আদেশে হাইকোর্ট সরকারকে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে খাদ্য আদালত স্থাপন এবং খাদ্য বিশ্লেষক ও খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগের নির্দেশ দেয়। এ রায় কার্যকর করার জন্য দুই বছরের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। অথচ চার বছর অতিক্রম হলেও এখনো প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠিত হয়নি। ফলে ভোক্তারা খাদ্যে ভেজাল রোধে আইনের আশ্রয় নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্গিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ অনুসারে খাদ্য আদালতকে খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট যে সব অপরাধ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, বিক্রি, সঠিক মান বা বিশুদ্ধ নয় এমন খাদ্য প্রস্তুত বা বিক্রি, খাদ্য প্রস্তুত বা বিক্রির স্থানে ভেজাল দ্রব্য রাখা বা রাখার অনুমতি প্রদান, নির্ধারিত লাইসেন্স ছাড়া সাদা তেল রাখা, রোগগ্রস্থ পশু বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাদ্য বিক্রি, ভুয়া লেভেল ব্যবহার, ভুয়া প্রচারণা, ভুয়া ওয়ারেন্ট প্রদান, খাদ্যবস্তু ঢেকে রাখতে ব্যর্থতা, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা বা ঘোষিত অন্য কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক খাদ্যবস্তু প্রস্তুত, বিক্রি বা স্পর্শ করা, খাদ্যবস্তু বিশ্লেষণ বা পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদানে অস্বীকৃতি, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বা খাদ্য পরিদর্শককে পরিদর্শন বা প্রবেশে বাধা প্রদান বা প্রতিরোধকরণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বা খাদ্য পরিদর্শককে জব্দকৃত খাদ্য, উপাদান, বস্তু ও পাত্র অপসারনে বাধা প্রদান । আইন অমান্যকারির বিরুদ্ধে জরিমানা, মালামাল জব্দ ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইন রয়েছে ঠিকই, আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নেই। জনগণের সেবক হিসেবে সরকারের উচিত খাদ্য দ্রব্য ভেজালকারিদের কঠোর হাতে দমন করা। তবেই দেশের নাগরিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে জীবন নির্বাহের নিশ্চয়তা পাবে। জনগণের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাই একমাত্র দাবি। ভেজাল ও বিষাক্ত খাবার থেকে নিরাপদ থাকতে ভেজালবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আমাদের বাজার থেকে ভেজাল পণ্য একেবারে তুলে দিতে হবে। বিএসটিআইকে এ ব্যাপারে নিতে হবে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা। বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে। ভেজালকারীদের সামান্য জেল-জরিমানায় কাজ হবে না। যারা জনস্বাস্থ্যকে ঠেলে দিতে পারে হুমকির দিকে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নকল বা ভেজাল ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের কারখানা একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রি করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৪ বছর কারাদন্ডের বিধান থাকলেও এ পর্যন্ত তা প্রয়োগের কোনো নজির নেই। খাদ্যে ভেজাল রোধে অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ নেই। ভেজালবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ হলে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ যেমন আশা করা যাবে; তেমনি ভেজালের হোতারাও নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হবে। খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধে সরকার, বিরোধী দল, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, গণমাধ্যম কর্মী সবাইকে দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে।
আজ পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ
আজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ। আজ সেখানে স্বাগত ১৪২১। জীর্ণ সবকিছুকে সরিয়ে নতুনকে বরণ করে নিচ্ছেন সে রাজ্যের মানুষ। নববর্ষে ২৪ ঘন্টার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,আজকের সকালটা বাঙালির কাছে একেবারে অন্যরকম। নতুন করে সব কিছু শুরু করার একটা দিন। বাঙালির কাছে আজকের দিনটা শুধু কেলেন্ডারের পাতা ওল্টানোর জন্য নয়। সকাল থেকেই দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট সহ বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় করেছেন মানুষ। বেলা বাড়তেই দোকানে দোকানে শুরু হল হালখাতার উদ্বোধন। চলছে মিষ্টি মুখের পালা। শার্ট-প্যান্টের বদলে পাঞ্জাবি পরা মানুষের সংখ্যাই বেশি নজরে পড়ছে। ভোটের উত্তাপের মাঝে বাঙালির আজ সত্যিকারের বাঙালি হওয়ার দিন। বিশ্বায়নের ঢেউকে উল্টো পিঠে নিয়ে বাঙালি হওয়ার স্রোতে ভেসে যাওয়ার দিন। ময়দানেও নতুন বছরে চলছে বারপুজোর পালা। নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে,"বাংলা নববর্ষে জড়িয়ে যাচ্ছে জাতিপরিচয়ের সুতীব্র অহংকার। একটি বিশেষ ভাষার মানুষের জাতীয় সংস্কৃতি বলে যাকে দাবি করছি, তা হল অনেক মানুষের, একাধিক জাতির মানুষের।এ পার বাংলায় পয়লা বৈশাখ উদযাপনে যে-ভাবে বাণিজ্যিক সম্ভোগ রয়েছে, ওপার বাংলায় সেই ভাবে রয়েছে সাংস্কৃতিক উপভোগ। অন্তত গুগল ইমেজে পয়লা বৈশাখের ছবি অনুসন্ধান করতে গেলে সেই বিষয়টায় চোখে পড়ে। কিন্তু এই দুই পারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার জন্ম একটি বড় ক্রাইসিস থেকে, সেই প্রেক্ষিত মাথায় রাখলে সেই দেশের নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা ও সে দিক থেকে জাতীয় সংস্কৃতি বলে কিছু উপস্থাপন করা বেশ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দেশও তার জাতীয় সংস্কৃতি উদযাপনে যদি মুক্তমনা না হয় ও মুক্ত অঙ্গন নির্মাণ না করে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে আদিবাসিন্দাদের দিক থেকে সাংস্কৃতিক বিরোধ আসতেই পারে। যেহেতু সেই দেশে নিশ্চিত ভাবেই পয়লা বৈশাখের মতো অনুষ্ঠান জাতীয়তাবাদের ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত।" বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের অনুসরণে কলকাতাতেও আয়োজিত হতে চলেছে একটি বইমেলা, কলেজ স্কোয়ারে। যেখানে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দেওয়া হবে বাংলা বই এবং মানুষকে উৎসাহিত করা হবে বাংলা বইপাঠে।
আবার ছাত্রলীগ, আবার অস্থির শিক্ষাঙ্গন
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উঠছে নানা সন্ত্রাসের অভিযোগ। নিজেদের মধ্যে কোন্দল, সংঘর্ষ, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর আক্রমণ, টেন্ডারবাজির ঘটনায় বারবার নাম এসেছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে একাধিক। আর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও থেকেছে দিনের পর দিন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর চার মাসের মধ্যে আবারও ছাত্রলীগের কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি মেডিকেল কলেজেও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। রাজশাহী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা, যার একজন নিজ সংগঠনের কর্মীদের হাতেই খুন হয়েছেন। অন্যজন খুনের পেছনে অবশ্য ছাত্রলীগ দায়ী করছে শিবিরকে। গত পাঁচ বছরে প্রায় চার শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। যার বেশিরভাগই হয়েছে নিজেদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোকানপাটে চাঁদাবাজি, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার মতো কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার দায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দিতে পারছেন না তারা। এসব কর্মকা- বিব্রত করেছে আওয়ামী লীগকেও। দলের নেতারা প্রকাশ্যেই নানা সময় ছাত্রলীগকে আরও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে মাঝেমধ্যে ভাষা হারিয়ে ফেলতে হয়। এ অবস্থা দু-একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির বিভিন্ন কমিটির ভেতরে দ্বন্দ্বের কুফল পড়তে শুরু করেছে। এগুলো নিয়ে যদি আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সজাগ থাকত তবে আর এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না। কিন্তু এভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন নষ্ট হয়ে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুদ্দিন আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চেয়েও বড় প্রশাসন ছাত্রলীগ। এখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যা বলবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাই শুনতে হবে, এমনটাই নিয়ম হয়ে গেছে। কেউ এর বিপরীতে গিয়ে টিকে থাকার চিন্তা করলে অনেক ধকল পোহাতে হয় তাকে।’ জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবাই অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত তা ঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় কমিটি অগোছালো আছে। মূলত সেসব জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। তবে কেন্দ্র থেকে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কখনোই ছাড় দেওয়া হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।’ সংগঠনে শৃঙ্খলা নেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই বছর কার্যকালের মধ্যে সম্মেলন দিতে হয়। তা না হলে নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পায়। হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ১১ জুলাই শেষ হয়েছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদকাল। কিন্তু এরপর আট মাস পার হলেও এখনো কোনো সম্মেলন হয়নি। পুরনো কমিটি দিয়েই চলছে দেশের বড় এই ছাত্র সংগঠনটি। যে কারণে কোথাও কোথাও সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সম্মেলন না দেওয়ায় সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বয়সের কারণে যারা ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়বেন, তারা চাচ্ছেন সম্মেলন আরও দেরিতে হোক। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা চাচ্ছেন দ্রুতই সম্মেলন হোক। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৯৭টি। কিছু কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কমিটিই মেয়াদ উত্তীর্ণ। অনেক থানা কমিটিতে ১০ বছর ধরে কাউন্সিল হয় না। মেয়াদপূর্তির পরও আগের কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। যারা কমিটিতে আছেন তাদের অনেকেরই এখন আর ছাত্রত্ব নেই। ২০১১ সালের ১০ ও ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম নির্বাচিত হন। জানতে চাইলে বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চাইবেন, তখনই সম্মেলন হবে। এনিয়ে সংগঠনের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই।’ মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটিগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটিগুলোর তালিকা হচ্ছে। সেখানে প্রকৃত ছাত্রদের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা বলছেন ছাত্রলীগের কারণে বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছে সরকার। এরপরও সংগঠনটিকে কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কারণে সরকার বার বার বিব্রত হয়েছে। তারপরও ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আসলে সরকারই চাচ্ছে না ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে থাকুক। এর কারণ সরকারই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে। যে কারণে ছাত্রলীগ বার বার বেপরোয়া হয়ে উঠছে।’ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ হোসেন মনে করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন ভঙ্গকারী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসত। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে যে অবস্থা চলছে, এর জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী না করে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী হিসেবে দেখতে হবে। অনেক জায়গায় নানা উপদলের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আর দলের মধ্যে কোন্দল থাকলে ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও কোন্দল থাকবে।’ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়াদ হত্যা ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংগঠন এবং প্রভাব বরাবরই বেশ শক্তিশালী। সেখানে খুন হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ। এই খুনের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে তারই সহকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামি দুইজনই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। তারা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সায়াদকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং অন্য সহযোগীদের নামও বলেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’ ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন ক্যাম্পাসে। এই হত্যার পর খুনিদের বিচার দাবিতে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস-পরীক্ষা সবই বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সংগঠনের দুই নেতাকে বহিষ্কারও করেছে ছাত্রলীগ। তবু ছাত্রদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ছড়িয়েছে নতুন উত্তেজনা। ২ এপ্রিল সায়াদ নিজ দলের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হন। তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে সায়াদ তার বড় ভাই মোয়াজ ইবনে মোমতাজকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের ছেলেরাই তাকে মেরেছে। ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শারীরিক অবস্থা যে খুব ভালো নয় তাও জানান তিনি। এ ঘটনায় মামলার পর দুইজনকে তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে ছাত্রলীগ। কিন্তু এর আগেও এ ধরনের অনেক বহিষ্কারের নজির রয়েছে কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবারও এই অন্যায়কারীদের দলে ফিরিয়ে আনার ঘটনাও ঘটেছে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরখানেক আগে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় রাব্বি নামে ১২ বছরের এক শিশু। একটি মামলাও করেছিলেন শিশুটির বাবা। কিন্তু পুলিশ এই ঘটনায় কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। আসামিদের কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি- জানতে চাইলে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে না পারায় বাদী ও আসামিপক্ষের আপসের ভিত্তিতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’ রাবিতে ছাত্রলীগ নেতা খুন, বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম উত্তেজনা চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত শুক্রবার নিজ কক্ষে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা রুস্তম আলী আকন্দ। ছাত্রলীগের অভিযোগ, এই খুনের সঙ্গে জড়িত জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। খুনের ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে ছাত্র সংগঠনটি। শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রধান ইমনকে প্রধান আসামি করে ৫ এপ্রিল মামলাও করেছে ছাত্রলীগ। এরপর দুই শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু ইমনকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের ঘোষণায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। কোর্স ফি কমানো আর সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় এক মাসেরও বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ শেষে এই ঘটনায় আবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বারবার এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার অস্থিরতা হয়েছে গত পাঁচ বছরে, যার বেশিরভাগ ঘটনারই অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১৬ জুলাইয়ের কথা। পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য টাকা তোলার পর এর ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে ওই সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত সোহেল সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেন। তিনি ছাত্রলীগের হল প্রস্তুত কমিটির শেরে-ই-বাংলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এর আগে ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট খাবারের টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন ছাত্রলীগের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম। জানা যায়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হলগুলোতে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য টোকেন বরাদ্দ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি পক্ষের কর্মী মাসুদ রানার জন্য টোকেন নিতে যায় একই পক্ষের জাহিদ ও জহুরুল। এ সময় হলের নিয়ম ভঙ্গ করে টোকেন নিতে বাদ সাধে ওই হলের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সভাপতি গ্রুপের কর্মী সাইদ, জাহিদ, জহুরুল, মশিউর, তৌফিক, রুহুলসহ ১০-১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী নাসিমকে শাহ মখদুম হলের তিন তলার ছাদে নিয়ে লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠি পেটা করে নিচে ফেলে দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে ঢাকার অর্থপেডিকস ইনস্টিটিউটে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হলে এখানে সাতদিন পর ২৩ আগস্ট তিনি মারা যান। এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীরা বেশ কয়েকদিন আগে সান্ধ্যকালীন কোর্স ও বাড়ানো ফি প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা ছিল বলে বেসরকারি একটি তদন্তে ও পত্রপত্রিকার খবরে উঠে এসেছে। এছাড়া ওই হামলার একাধিক ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। উত্তেজনা বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজেও পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ৬ এপ্রিল বিকেলে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এই ঘটনায় একটি ছাত্রাবাসে আক্রমণ করে ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের একাংশের কর্মীরা। এই ঘটনার পর উদ্বেগ ছড়িয়েছে কলেজটিতে। কারণ দুই পক্ষই হুমকি দিচ্ছে একে অন্যকে দেখে নেওয়ার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাম্পাসে বাড়তি নিরাপত্তার আয়োজন করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। ঢাবির আবু বকর হত্যার বিচার হলো না আজও ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলের সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় নিজ কক্ষে ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। কিন্তু ধাতব কোনো একটি বস্তুর আঘাতে মৃত্যু হয় তার। এই মৃত্যুর জন্য কে দায়ী, সে বিতর্কের শেষ হয়নি আজও। তবে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ না হলে যে এই প্রাণ হারিয়ে যেত না, সেটা বলা যায় সহজ করেই। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে শাহবাগ থানার দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা সবাই জামিনে মুক্ত এবং প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবু বকর হত্যার এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও সেখানে হত্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। দীর্ঘ ১৪ মাস মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। জাবির জুবায়ের হত্যার বিচারও হয়নি ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি বিকালে শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর নিজ সংগঠনের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা হামলা করে জুবায়ের আহমেদের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণাগারের পেছনে কুপিয়ে জখম করা হয় তাকে। পরদিন ৯ জানুয়ারি ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ছেলে জুবায়ের। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে সাভারের আশুলিয়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে এবং মামলার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের নির্দেশে ৬ মাস আগে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটির বিচার এখনো চলছে। বিচার হয়েছে কেবল বিশ্বজিৎ হত্যার ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে বিএনপি কর্মী সন্দেহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। আলোচিত ওই হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের আট নেতা-কর্মীকে ফাঁসি এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বিশ্বজিতের বাবাসহ ৩২ জনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে। উভয় পক্ষের সাক্ষ্য নেওয়া শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। সেই ছাত্রলীগ, এই ছাত্রলীগ এক সময় ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো লড়াই চালিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ ছিল অন্যতম। কিন্তু ছাত্রলীগ চলছে পুরোটাই উল্টোরথে। এখন জেলা কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। টেন্ডারবাজি এবং চাঁদাবজিই এখন ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর প্রধান কাজ। তবে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে চাকরির বাজার সীমিত। এখানে চাকরি পেতে হলে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেসব ছাত্র মেধাবী তারাও চাকরি পায় না। সেক্ষেত্রে অনেকে রাজনীতিকে বেছে নেয়।
স্বামীর ধর্ষণের শাস্তি স্বরূপ গণধর্ষণের শিকার হলেন অভিযুক্তের স্ত্রী। এই ঘটনার রূপকার ধর্ষিতার মা। মেয়ের ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে তিনিই পুরো ঘটনাটির পরিকল্পনা করেছেন। এমনকি অভিযুক্তের স্ত্রীকে গণধর্ষণে অংশ নেয় ধর্ষিতার বাবাও। রবিবার ভারতের উত্তরপ্রেদেশের বারাবাঁকির হায়দারগড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গণধর্ষিতার স্বামী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটছে৷ আর এই দিকে কিশোরীর মা মেয়ের অপমানের শোধ তুলতে তিনজন ব্যক্তি এবং নিজের স্বামীকে প্ররোচিত করায়। তারপরই ওই গৃহবধুকে অপহরণ করে ওই চার ব্যক্তি। আসান্দ্রা থানা এলাকার একটি গ্রামে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে৷ পরে নিগৃহীতাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা৷ রবিবার সকালে গ্রামবাসীরা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক৷ পুলিশ এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেছে৷ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা৷
তথ্য সূত্র: এই সময় ডট ইন্ডিয়া টাইমস ডটকম