দুর্নীতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দুর্নীতি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
প্রিপেইড মিটার ক্রয়ে পিডিবিতে দুর্নীতি-লুটপাটের পাঁয়তারা

প্রিপেইড মিটার ক্রয়ে পিডিবিতে দুর্নীতি-লুটপাটের পাঁয়তারা


প্রিপেইড মিটার ও মিটারিং সিস্টেমস ক্রয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (বিউবো) বড় ধরনের দুর্নীতি আর লুটপাটের পাঁয়তারা চলছে। অভিযোগ পছন্দের একটি কোম্পানিকে কাজ দিতে এ সংক্রান্ত দরপত্রে ব্যাপক কারসাজি করা হয়েছে। জানা গেছে, পিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুরো এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাগিয়ে নিতে ওই সিন্ডিকেট বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নাম পর্যন্ত ভাঙিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কিছুই জানেন না বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলেও জানান। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রকল্পের টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন কমিটির (টিইসি) অধিকাংশ সদস্য। জানা গেছে, দুদকের ভয়ে তাদের কেউ কেউ এখনও ফাইলে স্বাক্ষর পর্যন্ত করছেন না। যার কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশ আর্থিক মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। উন্নত গ্রাহক সেবা, সিস্টেম লস কমানো, বিদ্যুৎ চুরি রোধ এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) টার্নকি চুক্তির আওতায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ১ লাখ ৩৯ হাজারটি প্রিপেইড মিটার ও মিটারিং সিস্টেমস্ সংগ্রহের লক্ষ্যে ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন চিটাগাং জোনের আওতায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী কারিগরি দরপত্র খোলা হয়। এতে চারটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানসহ মোট পাঁচজন দরদাতা অংশ নেন। এরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইট্রন, চায়নার ওয়াসিয়ন, হেকসিং ইলেকট্রিক্যালস কোং লিঃ, কেসিজেএন্ড অ্যাসোসিয়েটস্ বাংলাদেশ (ল্যানডিস এন্ড গিয়ার, চায়নার মিটার) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কোম্পানি কনলগ। অভিযোগ উঠেছে, শুধু স্থানীয় একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়ার লক্ষ্যে বিউবোর দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট শুরুতেই নীলনকশা তৈরি করে। প্ররোচনার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকমানের দরদাতাগুলোকে কারিগরিভাবে অযোগ্য করার পাঁয়তারা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম দফায় কোনো কারণ ছাড়াই আইট্রন এবং ওয়াসিয়নকে কারিগরি মূল্যায়নে বাদ দেয়া হয়। যদিও দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বিউবোর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) সংশ্লিষ্ট দরদাতাদের কাছ থেকে যথাযথ কারিগরি ব্যাখ্যা চাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি আইট্রন বিশ্বজুড়ে ১৫০ বছর ধরে মিটার ব্যবসায় নিয়োজিত এবং প্রিপেইড মিটারের জনক। অপরদিকে ওয়াসিয়ন চীনের এক নম্বর মিটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। যাদের প্রিপেইড মিটার বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে চালু আছে। শুধু তাই নয়, ওয়াসিয়ন গ্র“পের তৈরি প্রিপেইড মিটার রাজশাহীর বরেন্দ্র প্রকল্পে ৭ বছর ধরে সাফল্যজনকভাবে চালু আছে। সম্প্রতি ডিপিডিসিও ওয়াসিয়ন গ্রুপ থেকে ১০ হাজার প্রিপেইড মিটার সিস্টেম ক্রয় করেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরবরাহকারীর প্ররোচনায় বিউবো তড়িঘড়ি করে গত ৭ মে বাকি তিন দরদাতা হেকসিং ইলেকট্রিক্যালস কোং লিঃ, কেসিজেএন্ড অ্যাসোসিয়েটস বাংলাদেশ ও কনলগের কারিগরি মান নির্ণয়ে সেম্পল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু তিন দরদাতাই বিউবোর কারিগরি চাহিদামাফিক নমুনা মিটারের সন্তোষজনক প্রদর্শন করতে পারেনি। নিয়ম অনুযায়ী এক্ষেত্রে তিনটি কোম্পানিকে ডেকে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায় কিনা সেটা দেখার কথা। কিন্তু পিডিবি তা না করে তিন দরদাতাকেই অযোগ্য ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে যে সব প্রতিষ্ঠানের সুনাম আছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার অর্থ তাদের পছন্দের কোম্পানির কাছ থেকে মিটার ক্রয় করা। তাদের মতে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে সরকারের। এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত ও সরকারের অর্থ লোপাট করার কৌশল মাত্র। অভিযোগ রয়েছে, কেসিজেএন্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের যোগ্য প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে মনোপলি করে পিডিবিতে কাজ করে আসছে। এ ক্ষেত্রে পিডিবির সঙ্গে তাদের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। বিউবোর আরেকটি টেন্ডারেও এই কোম্পানিকে কাজ দিয়ে গত চার বছরেও সে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি। তার পরও কেসিজেএন্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্ররোচনায় সিন্ডিকেট আগের ভুলটি করতে যাচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর