বাণিজ্যের কত প্রকারই না ধরণ! কেউ রূপের ফাঁদে ফেলে মানুষ ঠকায়, আবার কেউ
প্রেমের ফাঁদে ফেলে পকেট ভরে। কমার্শিয়াল এই যুগে মানুষের দেহ-মন সবই এখন
অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার। আর এর সাথে যখন যুক্ত হয় কূটিল মস্তিষ্ক, তখন তো
আর উপায়ই থাকে না!
মেয়েটার নাম, দোলা আক্তার। বয়স মাত্র ২০ বছর। এই বয়সে যখন তার অনাগত
জীবন স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা, ঠিক সে সময়ই সে মেতে উঠেছিল প্রতারণার ছোবল
দিতে। মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সে গড়ে তুলত প্রেমের
সম্পর্ক। দেখা করার নামে নির্ধারিত ফ্ল্যাটে নিয়ে কৌশলে ওই ব্যবসায়ীর
সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখত দোলা এবং তার সঙ্গীরা। পরে ওই ছবি দেখিয়ে
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দাবি করা হতো লাখ লাখ টাকা। টাকা দিতে আপত্তি করলেই
গ্রেফতার এবং সংবাদ প্রচারের ভয়। ভুয়া প্রেমিকা, পুলিশ এবং সাংবাদিকের
সমন্বয়ে গড়ে তোলা ওই প্রতারক চক্রটি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক ব্যবসায়ীর কাছ
থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।
প্রতারিত এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর
পাইকপাড়ার একটি বাসা থেকে ওই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়্যারলেস সেট,
হ্যান্ডকাফ ও একটি ডিজিটাল ক্যামেরা। ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার
মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে গ্রেফতার অভিযান চালান ডিবির সহকারী
পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ্ চৌধুরী।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- দোলা আক্তার, আবু তালেব, ভুয়া ডিবি ইন্সপেক্টর
আজাহার উদ্দিন খান, ভুয়া ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর মো. মোস্তফা, ভুয়া সাংবাদিক
শামীম সিকদার ও সালমা বেগম। প্রতারক চক্রটির মূল হোতা আবু তালেব নিজেকে
ডিবির সহকারী কমিশনার পরিচয় দিত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট লন্ডন প্রবাসী এক
ব্যবসায়ীর সঙ্গে দোলার আপত্তিকর ছবি তোলে। পরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা
ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা আদায় করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে একই ভাবে ১৭ লাখ টাকা আদায় করে।
সর্বশেষ মিরপুরের এক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে তারা ৫ লাখ টাকা আদায় করে।
ওই নেতার মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে প্রতারকদের গ্রেফতার
করা হয়।
সূত্র: দৈনিক সমকাল