বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জীবন খুব একটা সুখের নয়। নানা সমস্যা নিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করছেন। তবে এই চাকরি বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং বাল্য বিবাহ হ্রাসে সহযোগিতা করছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন-এর নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার চাকরি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেছে, তাদেরকে আরো বেশি সময় স্কুলে থাকতে উৎসাহিত করছে আর সবচেয়ে বড় যে উপকারটি করছে, তা হচ্ছে- এই চাকরি মেয়েদের বাল্য বিবাহের হার হ্রাসে ও অল্প বয়সে মা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করছে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১১৩৪ জন পোশাক শ্রমিক মারা যাওয়ার পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেশ কিছু নামকরা মানবাধিকার সংগঠন। কিন্তু এমন খারাপ কিছুর মধ্যেও এই সেক্টরে নারীদের জন্য বেশ ভালো কিছুর সন্ধান পাওয়া গেছে ওই গবেষণা প্রতিবেদন থেকে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অর্থনীতিবিদ রাচেল হিথ এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল ম্যানেজমেন্টের মাশফিক মোবারক ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ৬০টি গ্রামের ১৩৯৫ জন নারীর স্কুলে অবস্থানের সময়, বাল্য বিয়ে এবং অল্প বয়সে মা হওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। গত মাসে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। দেখা গেছে, কোনো পোশাক কারখানার আশেপাশে অন্তত ছয় বছরের মতো সময় বসবাস করছে এমন মেয়েরা, অন্য জায়গা যেমন গ্রাম বা শহরের অন্য অংশের মেয়েদের চেয়ে ২৮ শতাংশ কম বাল্য বিয়ে করেছেন। যেসব মেয়ে কারখানার কাছে বাস করে, জরিপে দেখা গেছে তারা তাদের ভাইদের চেয়ে অন্তত দেড় বছরের মতো সময় বেশি পড়াশোনা করেছেন। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গ্রামের চেয়ে তৈরি পোশাক কারখানার আশপাশে বাসকারী মেয়েদের শিক্ষার হার অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। ১০ থেকে ২৩ বছর বয়সী ৭৯ শতাংশ নারীই বিয়ের আগে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আশেপাশে কারখানা থাকলে ৭.২ শতাংশ বেশি মেয়েশিশু স্কুলে ভর্তি হয়, এই হার ৫ থেকে ৯ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। গবেষণায় তারা দেখছেন, নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এসব এলাকায় সরকার বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। গবেষণায় বলা হয়েছে, পোশাকশিল্পের প্রভাবে উল্লেখযোগ্যভাবেই বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে মা হওয়ার প্রবণতা কমেছে। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):