নব্বই শতাংশ গৃহকর্মীই নির্যাতনের শিকার


দেশের কোথাও দিন-রাতের কোনো সময়ই নিরাপদ নয় গৃহকর্মী নারী-শিশুরা। গত ১৪ মাসে অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পযর্ন্ত সারা দেশে ৬৪ জন গৃহপরিচারিকা খুন ও ১২ শতাধিক গৃহশ্রমিক ধর্ষণসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অধিকাংশ খুনই করা হয়েছে ধর্ষণের পর। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯শ গৃহপরিচারিকাকে খুন করা হয়। প্রতি বছর গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুনের ঘটনা বাড়ছেই।

সরেজমিন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শুধু রাজধানীর গৃহকর্মী নারী-শিশুর নয়, সারা দেশেই এমন চিত্র। এ কাজে যুক্ত প্রায় ৯২ শতাংশই শিশু। তাই শোষণ, বঞ্চনা ও শারীরিক নির্যাতন আরও তীব্র। বাংলাদেশ লেবার সার্ভে ২০০৬ সালের তথ্য অনুযায়ী গৃহকর্মে নিয়োজিত ১৫ বছরের ওপরের বয়সী শিশুর সংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ৩১ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় পৌনে ৬ লাখ। তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি শ্রমিক গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এদের ৯০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার।

৭ জানুয়ারি ২০১৩ জনৈক সংসদ সদস্যের এপিএস কাজল মোল্লা তার গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর পৈশাচিক নির্যাতন করে গাজীপুর কাপাসিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। ৫ জুন রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় গৃহকর্মী ফরমিন আক্তার কেয়ার (১৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে গৃহকর্তা রাশেদুল ইসলাম ও গৃহকর্ত্রী সাবরিনা জাহান গ্রেফতার হলেও বিচার এখনও শেষ হয়নি। ১৫ অক্টোবর গৃহকর্মী শারমিনকে (১৫) হত্যা করা হয়। বনানীর ১ নম্বর রোডের ৭৮ নম্বর বাড়িতে কাজ করত শারমিন। রাজধানীর ধানমণ্ডির ১০/এ নম্বর রোডের বাসিন্দা ব্যাংকার সুনীল মজুমদারের বাড়িতে কাজ করত মনিমালা (১৪) ও মাধবী (১২) দুবোন। একদিন দুবোনকে নির্যাতন শেষে জোর করে ছাদে তুলে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিক মনিমালার মৃত্যু হয়। দুপা ও হাত ভেঙে যায় মাধবীর। ঘটনাটি ঘটে ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। শ্যামপুর এলাকায় ৬ সেপ্টেম্বর রাতে তানিয়া (৮) নামক গৃহশ্রমিককে ধর্ষণের পর খুন করা হয়। মায়ের সঙ্গে ভাত বিক্রি করত শিশু রিতু (১০)। ২০ জুন ২০১৩ রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ের ট্রপিকানো টাওয়ারের ৪র্থ তলার টয়লেটে রিতুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

জানা যায়, নির্যাতনের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটনা নানাভাবে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান বলেন, গৃহকর্মীরা এক একটি পরিবারে বছরের পর বছর থাকলেও তাদের দাস-দাসী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। চলে অমানবিক নির্যাতনসহ পৈশাচিক শারীরিক নির্যাতন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা অমানবিক এবং এর ধরনের অপরাধকে কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় সম্প্রতি আদুরির বিষয়টি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তার সাংবিধানিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে সবকিছু আইন প্রয়োগ করে নয়, সামাজিকভাবে নিজেদের ভেতরে সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ ধরনের ঘটনাকে কমিয়ে আনতে হবে।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):