ভাড়াটে সন্তানে নগরীতে চলছে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা!

নগরীতে ভাড়াটে সন্তান দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা বেশ জমজমাট। চলতে ফিরতে হরহামেশাই চোখে পড়ে- এক পাল ছেলেপেলে নিয়ে হাজির জনম দুঃখী মা, বাবা, ভাই অথবা বোন। বড় পরিবার, উপার্জনের পথরুদ্ধ- ইত্যাদি গল্প শুনিয়ে মানুষের হৃদয়ে করাঘাত করে এরা নিজেদের ঝুলি ভরে।
মিলন ৯ বছরের শিশু। রাস্তার মোড়ে ভাড়াটে শিশু কোমরে জড়িয়ে তাকে হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। সামনে বা পেছনে থাকে কথিত মা। তার কোলেও নিস্তেজ শিশু। সবাই মিলে ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষা করছে। দেখে মনে হবে বাবাহীন কোনো পরিবার। কিন্তু ওরা আসলে কেউ আপন নয়। সবাই ভাড়াটে। ওদের কাজই এখন ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষাবৃত্তির জগতে শিশু ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়ায় আসে মা এবং আট-নয় বছরের সন্তান। ভাড়াটেরা মিলে হয়ে যায় এক পরিবার। চলে ভিক্ষাবৃত্তি।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, ভাড়াটে সন্তান দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির ভয়াবহ দৃশ্য। ভাড়াটে শিশু নিয়ে ভিক্ষার পেছনে আছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ চক্রটি শিশু চুরি থেকে শুরু করে দরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা ও মাদকাসক্ত মায়েদের সন্তান ভাড়া নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি চালাচ্ছে। দিন শেষে শিশু ভাড়া হিসেবে দেড় থেকে দু’শ টাকা আর কিশোরী মায়ের জন্য কিছু দিয়ে বাকি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। বিনা শ্রম আর পুঁজিতে চলছে এই ব্যবসা। আইন-শৃংখলা বাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে শিশুদের দিয়ে এমন নির্মম ব্যবসা চালালেও কেউ কিছু বলে না। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এসব সংস্থার সদস্যরা নিশ্চুপ।
মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় মিতুর। দুই বছরের মাথায় বিয়েটা ভেঙে যায়। কিন্তু ততদিনে কোলে চলে এসেছে একটি মেয়ে শিশু। জীবনের টানে একদিন সন্তান নিয়ে মিতু চলে আসে রাজধানীতে। তারপর আরও দু’বার বিয়ে করে সংসারী হওয়ার চেষ্টা করেছে সে। বিয়ে টেকেনি কিন্তু কোলে এসেছ আরো দু’টো সন্তান। সন্তান ভাড়া দিয়ে তার এখন প্রতিদিনের আয় ৬০০ টাকা। এই টাকায় মিতু মাদক সেবন করছে। মিতু আরও সন্তান চায়। প্রতি সন্তানে আয় ২০০ টাকা। যা দিয়ে পাওয়া যাবে আরও মাদক, আরও নেশা।
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, এমন নিষ্ঠুরতা মানবাধিকার শুধু লংঘনই হচ্ছে না, পুরো জাতি ও সমাজ অপরাধী হচ্ছে। এমন বর্বরতা বন্ধ করা জরুরি।
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারন্যাশনাল কার্ডিওলজির ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক বলেন, অচেতন অবস্থায় এসব শিশুর মৃত্যু হতে পারে। চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর ফলে নিমোনিয়া, লিভার নষ্ট থেকে শুরু করে নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):