প্রকৃতির ১০ বিস্ময় যা বাস্তব বলে বিশ্বাস হয় না

প্রকৃতি যে কতটা সুন্দর আর বিস্ময়কর সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিনিয়ত আমরা কত শত বিস্ময়কর ঘটনা দেখছি বলেই খুব সহজে এটি মেনে নিতে পারি। আজ তেমন দশটি জায়গা এবং বস্তুর কথা বলব যেগুলোর অস্তিত্ব পৃথিবীতে রয়েছে। বিশ্বাস করতে হয়তো কষ্ট হয় তবে প্রকৃতিতে সত্যিই এর দেখা পাওয়া যায়।
১। নোংরা বজ্রপাত
আগ্নেয়গিরির উদগিরনের সময় এর উপর মাঝে মাঝে বজ্রপাত হয়, একেই বলা হয় ভলকানিক লাইটনিং বা ডার্টি থান্ডারস্ট্রম। জার্নাল সাইন্সের এক গবেষনায় দেখা গেছে উদগিরণে নির্গত পাথরের কণা, গ্যাস, ছাইয়ের ঘর্ষণে স্থির চার্জের উৎপত্তি হয় যা একসাথে হয়ে আগ্নেয়গিরির উপরে সচরাচর বজ্রপাত ঘটায়। আগ্নেয়গিরির উদগিরিত বিভিন্ন কণা থেকে এর উৎপত্তির জন্য একে ডার্টি থান্ডারস্ট্রম বা নোংরা বজ্রপাত নামকরণ করা হয়েছে।
Volcanic lightning
২। জমাট বাধা বুদবুদ
কানাডার পশ্চিম এলবার্টার উত্তর সাস্কাচিবান নদীতে আব্রাহাম নামে এই কৃত্তিম লেকটি অবস্থিত, ১৯৭২ সালে এটি তৈরী করা হয় এবং সিলাস আব্রাহামের নামে নামকরণ করা হয়। এই লেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা পানিতে বুদবুদ আকারে নির্গত হয়। শীতকালে যখন পানি জমে যায় তার সাথে এই বুদবুদগুলোও আটকে যায়। ফলে তৈরী হয় এই জমাট বাধা বুদবুদ।
Frozen air bubbles
৩। মেক্সিকোর ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক ঝরণা
এর সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য খুজে পাইনি, তবে নিচের ভিডিওটি দেখে এর বাস্তব ভিত্তি আছে বলে মেনে নিয়েছি।
Underground natural springs

৪। দানবীয় ক্রিস্টাল গুহা
এটি মেক্সিকোর নাসিয়া নামক জায়গায় অবস্থিত। ক্রিস্টালগুলোর প্রধান উপাদান জিপসাম(প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় ক্রিস্টাল), এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই তৈরী হয়েছে। এক একটি ক্রিস্টাল বীমের গড় দৈর্ঘ্য ৩৬ ফিট(১১মিটার) এবং ওজন আনুমানিক ৫৫টন। গুহার ভেতরের তাপমাত্রা প্রায় ৫৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। তাই উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যতীত এই গুহার ভেতর কোন মানুষ ১০ মিনিটও টিকতে পারবে না।
Giant crystal cave
৫। নীল ঢেউ
সাগরের নীল পানি দেখেছেন ঠিকই, কিন্তু রাতের বেলা ঢেউগুলো এসে যখন তীরে আছড়ে পড়ে তখনও যদি নীল হয়ে জ্বলে তবে সেটি কেমন দেখাবে! সেটি কি আসলেই সম্ভব?
হ্যা সম্ভব, যে ছবিটি দেখছেন সেটি বাস্তবে তোলা ছবি, ফটোশপ নয়। তবে পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় এটি দেখা যায়। সমুদ্রে কিছু কিছু ফাইটোপ্লাংটন আছে যাদেরকে বলা হয় বায়ো-লুমিনেসেন্স। এরা বিপদের সম্মুখীন হলেই শত্রুকে ভয় দেখাতে আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা হিসেবে হালকা নীল আলোর বিচ্চুরণ ঘটায়। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন পানিতে থাকা ফসফরাস বাতাসের সংস্পর্শে এসে এমন নীল আলোর বিচ্চুরণ ঘটায়। আটলান্টিক এবং প্যাসিফিক মহাসাগরে এটি বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশে সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও রাতের বেলা এটি দেখা যায়। ছবিটি মালদ্বীপে তোলা।
Shimmering shores e
৬। বলিভিয়ার সল্ট ফ্ল্যাট
দক্ষিণ পশ্চিম বলিভিয়ায় আন্দিজ পর্বতমালার কাছে এটি অবস্থিত। প্রায় ১০ হাজার ৫ শত ৮২ কিলোমিটার জুড়ে এটি বিস্তৃত এবং সমুদ্র সমতল থেকে এর উচ্চতা ৩ হাজার ৬ শত ৫৬ মিটার। বলা হয়, এটি এমন জায়গা যেখানে আকাশ মাটিতে মেশে।
Reflections in the flooded salt desert Salar de Uyuni, Bolivia. Sunset
৭। মস্কোর লাইট পিলার
বরফের ক্রিস্টালে আলোর প্রতিফলনের ফলে যখন সোজা উপরে উঠে যায় ঠিক তখনি এই ঘটনাটি দৃষ্টিগোচর হয়। সূর্যই এখানে আলোর উৎস যার কারণে একে সোলার পিলারও বলা হয়। মস্কোর আইডাহোর শহরে আলোর প্রতিফলনের এই অপূর্ব দৃশ্যটি দেখার সুযোগ মিলে।
Light pillars o
৮। অ্যান্টার্কটিকার রক্তক্ষরণ
লবণাক্ত পানিতে আইরন অক্সাইড দূষিত হয়ে রক্তলাল প্রবাহ টেইলর গ্লাসিয়ার থেকে পশ্চিম বনি লেক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। লাল রংয়ের প্রবাহের জন্যেই একে অ্যান্টার্কটিকার রক্তক্ষরণ নামকরন করা হয়েছে। এটি পূর্ব এন্টার্কটিকার ভিক্টোরিয়া ল্যান্ডে অবস্থিত।
The Blood Falls in Antartica
৯। বেইজিং এর দৈত্যাকৃতির মেঘ
চীনের রাজধানী বেইজিং এর আকাশে ২০১২ সালে এটি দেখা গিয়েছিল। দেখতে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মত, নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের পর যেমন দেখা যায়। চীনের জাতীয় বায়ুমন্ডলীয় পরিষদের গবেষণায় পরবর্তীতে জানা যায় এটি স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট একটি পুঞ্জীভূত মেঘ। বায়ুস্থরের উপরের দিকের উষ্ণতাই এমন অদ্ভূদ আকার সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
storm-cloud-12
১০। জলতলের ডুবো অরণ্য
কাজাকিস্তানের কান্দেইজ লেকটি জলতলের ডুবো অরণ্য নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে ভূমিকম্পের মাধ্যমে মাটি সরে বাধের তৈরী হয় এবং সেখানে পানি জমে সৃষ্টি হয় লেকটির। ভূমিকম্পের আগে এখানে যে গাছগুলো ছিল সেগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। আশ্চর্য্যজনকভাবে সেগুলো মরে না গিয়ে বরং আরো জ্যান্ত হয়ে উঠে এবং এই ডুবো অরণ্যের তৈরী হয়। এটি প্রায় ১ হাজার ৩ শত ফিট চওড়া এবং ৩০ ফিট গভীর।
The underwate
চেষ্টা করলাম যতটা সম্ভব তথ্যবহুল করে লিখার জন্যে। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):