পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোতে ব্যায় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা


পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড-এর কাছ থেকে এ আর্থিক প্রস্তাব পাওয়া গেছে। মূল অবকাঠামো নির্মাণের আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নেয়া আরও তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি সর্বনিু দর। পাশাপাশি এ কাজের জন্য সরকার যে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করেছে তার তুলনায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ কম ব্যয়ের প্রস্তাব পাওয়া গেছে চীনের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। সূত্র মতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির অ্যাওয়ার্ড প্রদানের দিন থেকে ১৪৬০ দিন বা ৪ বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। এর জন্য সরকারকে পারফরম্যান্স সিকিউরিটি অর্থ দিতে হবে। এ অর্থের পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চুক্তি সমঝোতার আগেই আলোচনার মাধ্যমে এ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সেতু নির্মাণের জন্য চীনের প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া হলে তাদের অর্থ প্রদান করা হবে দেশী ও বৈদেশিক মুদ্রায়। চুক্তি মূল্যের ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় টাকা এবং ৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ সরকারি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। ব্রিজের সব ক্রয়, সংগ্রহ ও নির্মাণের চুক্তির প্রস্তাবটিতে সরকারের ক্রয়নীতি ২০০৮ (পিপিআর) এবং বিশ্বব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করার শর্তারোপ করা হয়েছে। এদিকে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম অর্থ দেয়ার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ৩২৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ২০১০ সালে পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৪২টি প্রতিষ্ঠান প্রি-কোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্ট ক্রয় করে। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান কাগজপত্র জমা দিয়ে দরপত্রে অংশ নেয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি যোগ্যতার মূল্যায়নের ভিত্তিতে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি. স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি কর্র্পোরেশন, ডেইলিম-এলঅ্যান্ডটি জয়েন্ট ভেঞ্চার, ভিনসি-এইচসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার ও চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি. প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রদান করে। ২০১১ সালের ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সম্মতি প্রদান করে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকায় চায়না কমিউনিকেশন কনসালটেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নাম থাকায় ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে এ প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দেয়া হয়। ফলে টিকে থাকে চারটি প্রতিষ্ঠান। এরপর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও ডিটেল ডিজাইন কনসালটেন্ট মাউনসের (একোমো) চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কারিগরি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ভিনসি-এইচসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার বাদে অপর তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের কারিগরি সক্ষমতার কাগজপত্র দাখিল করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই তিন প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠাতে বলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। অবশ্য এর জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আর ১০ সপ্তাহ বেশি সময় চায় স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি কর্পোরেশন এবং ১২ সপ্তাহ বেশি সময় চেয়েছে ডেইলিম-এলঅ্যান্ডটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। এ বিষয়ে ডিটেল ডিজাইন কনসালটেন্ট কোনো সময় বৃদ্ধি করেনি। সময়ের মধ্যে একমাত্র চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি. তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও ডিটেল ডিজাইন কনসালটেন্ট যাবতীয় দলিলাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সর্বনিু দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সুপারিশ করে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি. পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তাদের দরপত্রে খরচের প্রস্তাব দিয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ টাকা ১৫ পয়সা।
সূত্র: যুগান্তর

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):