সার্ভার বন্ধ তবু বিক্রি হচ্ছে রেলের ই-টিকিট !

train_thumb.jpgসুজিত সাহা : রেলের নিয়মিত যাত্রী মো. জসিম উদ্দিন। ৫ মার্চ তূর্ণা নিশীথার একটি ই-টিকিট কেনেন কালোবাজার থেকে, প্রায় ১ হাজার টাকা বেশি দামে। টিকিটে কেনার সময় উল্লেখ আছে সকাল ৮টা ৫৮ মিনিট। যদিও সকাল ৯টার আগে ই-টিকিট কেনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ রাত সাড়ে ১০টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সার্ভারটি বন্ধ থাকে।
সার্ভার চালুর আগেই ই-টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। কোনো টিকিটে সময় উল্লেখ থাকছে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট, কোনোটিতে আবার ৮টা ৫৬ মিনিট। কালোবাজারে এসব টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দামে।
ই-টিকিট কালোবাজারে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তাও। নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সিএনএস) কিছু কর্মকর্তা নির্ধারিত কিছু গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টিকিট কেনার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যদিও সিএনএস কর্মকর্তাদের দাবি, সার্ভার বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই সকাল ৯টার আগে ই-টিকিট সংগ্রহের সুযোগ নেই। এমনটা হয়ে থাকলে তা সাময়িক ত্রুটির কারণে।
ই-টিকিট কিনতে ভোগান্তির শিকার এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমি রেলের ই-টিকিট সংগ্রহ করছি। যদিও টিকিট না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। অনেক সময়ই সার্ভার অফলাইনে থাকছে। পরে যখন চালু হচ্ছে, তখন আর টিকিট থাকছে না। নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে টিকিট বিক্রির কারণেই এমনটা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে কম্পিউটারাইজড টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করে ১৯৯৪ সালে। ওই সময় এর কাজ পায় টেকনোহ্যাভেন। পরে দায়িত্ব পায় ড্যাফোডিল সফটওয়্যারস। এরপর সিএনএস ও ড্যাফোডিল যৌথভাবে কাজ করে। বর্তমানে সিএনএস এককভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ই-টিকিট বিক্রি পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নকাজ করছে সিএনএস। পাশাপাশি সেলফোন ও ইন্টারনেটে টিকিট বিক্রি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের দায়িত্বও পালন করছে তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিএনএসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। সার্ভার কম্পিউটারের ব্যাটারি নষ্ট থাকায় ই-টিকিটের সময় নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। আশা করি আগামীতে এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।’
সার্ভার চালুর আগেই টিকিট বিক্রি হওয়ার কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা রশিদা সুলতানা গণি। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০ মে কাজ শুরু করে সিএনএস। ২০১২ সালে সিএনএসের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে সিএসআরটির কাজ দিতে না পারায় পিপিআর অনুসারে সিএনএসের কার্যক্রম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দুই বছর বর্ধিত করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে এর মেয়াদ শেষ হবে। তবে নতুন দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি বর্তমানে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিএনএসের সঙ্গে চুক্তি আরো নয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও গ্রুপ টিকিটের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ১ শতাংশ রেলের কাছ থেকে পায়।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):