শিশু পল্লীর অনাথ : শিশুদের সঙ্গে সময় কাটালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার মাঝেও অনাথ শিশুদের সঙ্গে গতকাল রোববার বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন। তিনি গতকাল দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত এসওএস শিশুপল্লীতে অনাথ শিশুদের মাঝে বেশ কিছু সময় কাটান।
প্রধানমন্ত্রী অনাথ শিশুদের চকোলেট, মিষ্টি, ফুল ও বেলুন উপহার দেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিশুদের দুপুরে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। শিশুরা প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ও তার স্ত্রী পেপি সিদ্দিক, মেয়ে লীলা ও ছেলে কাইয়াস মুজিব সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইউনান গভর্নরের সাক্ষত্
এদিকে সফররত চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর লী ঝিহেং গি চমত্কার বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশ আগামী দিনে বৈশ্বিক বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে। আর এক্ষেত্রে চীনের ইউনান প্রদেশ নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে।
চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর লি ঝিহেং গি গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত্কালে এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল সাংবাদিকদের একথা জানান।
গভর্নর লি ঝিহেং গি বাংলাদেশের আতিথেয়তার
উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ইউনান প্রদেশ বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী।
তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ২০১০ সালের কুনমিং সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, কুনমিং হচ্ছে বাংলাদেশের নিকটতম সহযোগী।
চীন সব সময় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিল এবং থাকবে উল্লেখ করে গভর্নর গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে বিজয় অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
গভর্নর বলেন, চীন অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৬ ভাগেরও বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি অঙ্গিকারের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
লি ঝিহেং গি বলেন, চট্টগ্রা থেকে কুনমিং পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম-কুনমিং এরই মধ্যে ‘সিস্টার সিটিতে’ পরিণত হয়েছে।
তিনি আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য চীন-দক্ষিণ এশিয়া প্রদর্শীতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি আনুষ্ঠানিকপত্র হস্তান্তর করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনী বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ব্যবাসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য বেইজিংয়ের প্রশংসা করেন।
তিনি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ২০১০ সালে তার (প্রধানমন্ত্রী) চীন সফরের পর দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা মিয়ানমার হয়ে কুনমিং পর্যন্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) করিডোর বাস্তবায়িত হলে চারটি দেশই লাভবান হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে গত ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে চীনের সমর্থনের জন্যও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের যোগাযোগ, আইটি, প্রতিরক্ষা, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আগামীতেও চীনের এসব সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সমপ্রতি নিখোঁজ হওয়া মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে থাকা চীনের ১শ’ ৫৩ জন নাগরিকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে বংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
ইউনান প্রদেশের গভর্নর লি ঝিহেং নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধানে বাংলাদেশের ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):