বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঢাকা

দিন যত যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। একটি মেগাসিটির যে নাগরিক সুবিধা থাকার কথা তা পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। দিন দিন নাগরিক সেবার মান কমেই যাচ্ছে। নগরবিদেরা নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়া, বিশুদ্ধ পানির সংকট, গ্যাস সংকট, অপরিচ্ছন্ন নালা-নর্দমা ও মশার উপদ্রবকে এ মুহূর্তে নাগরিকদের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কথায় কথায় নগরে ঘর-বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি এখন রাজধানীবাসীর কাছে নিত্যদিনের যন্ত্রণার মতো হয়ে গেছে। বছরের শুরু ও মাঝামাঝিতে আগাম নোটিস ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না- ডিসিসি কর্তৃক বাড়িভাড়ার নির্দেশনা। এমনকি ব্যাপারটি সম্পর্কে জানেন না অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া। অন্যদিকে, বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ ও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৬৪-এর প্রয়োগ হচ্ছে এমন নজিরও নেই।
রাজধানীতে দিন দিন তীব্র হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গরম বৃদ্ধির সঙ্গে এ সংকট আরও বাড়ছে। ওয়াসার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার। কিন্তু তারা সরবারহ করছে ২০০ কোটি লিটার। পানি সংকটের কারণে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের ড্রামে করে, ওয়াসার গাড়িতে ভরে এবং ওয়াসার পানির পাম্পে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তা ছাড়া এ সময় প্রতি বছর বিদ্যুৎ সংকটের কারণে পানিস্বল্পতা তৈরি হয়।
আগে শীতে গ্যাস সংকট থাকলেও এখন গরমেও নগরীর গ্যাস সংকট কাটছে না। গ্যাসের অভাবে আবাসিক গ্রাহক ও শিল্প কারখানার মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম। বর্তমানে ঢাকা মহানগর এলাকায় গ্যাসের চাহিদা ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এ ছাড়া গ্যাসের পুরনো লাইনের ত্রুটি ও অবৈধ সংযোগের কারণে বিদ্যমান গ্যাস সংকট থেকেই যাচ্ছে।
সন্ধ্যা নামতেই নগরীর গৃহিণীদের মধ্যে ভর করে মশা আতঙ্ক। শুধু সন্ধ্যা নয়, এখন সারাদিনই শশার উপদ্রব বলা চলে। নগরবাসীর অভিযোগ, সরকারের সেবাদানকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মশা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ না থাকায় নগরজুড়ে এখন মশার উপদ্রব।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকার ড্রেন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনারও বেহাল দশা। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন সে অনুপাতে নাগরিকদের স্যুয়ারেজ লাইন ও নালা-নর্দমার সুবিধা দিতে পারছে না। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্যে, ঢাকা শহরের গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনাসহ অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের ৬০ শতাংশ সরানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। বাকি ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানটি জনবলস্বল্পতাসহ নানাবিধ কারণে সরাতে অক্ষম।
সূত্র: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):