গাইবান্ধায় শিক্ষা বিস্তারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ!


নিরক্ষর মানুষদের মধ্যে বিনা পয়সায় শিক্ষার আলো বিস্তারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চোখে পড়েছে গাইবান্ধার প্রত্যন্ত এক গ্রামে। লেখাপড়া না জানা মানুষদের জন্য গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের নাম অন্ধজনে আলোর পথ। রাতের বেলা সেখানে ’অ, আ, ক, খ’র মতো বাংলা বর্ণমালার সাথে পরিচয় হচ্ছেন দিন মজুর, কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।সন্ধ্যার পরপরই গাইবান্ধা সদর উপজেলার বালুয়া বাজারের এককোন থেকে ভেসে আসে পড়াশোনার এমন আওয়াজ। এটি কোন কোচিং, কিন্ডার গার্টেন বা স্কুল নয়। আর এখানে যারা পড়াশোনা করেন তাদের অনেকেই কাঁচামাল ব্যবসায়ী। কেউ শ্রমিক কেউ দিন মজুর। যার যার কাজকর্ম সেরে রাতের বেলা মোমের আলোয় পড়াশোনা করেন এখানে।এ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্য, ’শহরে যাই, গ্রামে-গঞ্জে যাই বা হাট-বাজারে যাই, হাটের নাম বলতে পারি না। হিসাবপাতি সঠিক মতন করতে পারি না। সেই কারণে আমরা এই উদ্যোগটা নিলাম।’জীবনের মধ্য বা শেষ বয়সে এসেও দমেনি এই মানুষগুলো। পড়াশোনা শেখার অদম্য ইচ্ছা তাদের টেনেছে এই প্রতিষ্ঠানে। পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়ে নিরক্ষর এই মানুষগুলো বুঝতে পেরেছে পড়াশোনার বিকল্প নেই।এ বিষয়ে স্থানীয় লোকেরা বলেন, ’এখানে অ, আ শিখতে আসছি। শিখে ব্যবসা-বানিজ্য করব। বাকি-টাকি দিলে লিখতে পারব। মুর্খ মানুষ লেখাপড়া জানি না, এখানে শিখবার আসছি।’শুধু অক্ষর জ্ঞান নয়, বাল্য বিবাহ, যৌতুকসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধী সম্পর্কেও এখন সচেতন এই মানুষ গুলো।এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ’আমাদের স্যারেরা বলল, অল্প বয়সে বা কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের বিয়ে দিলে অসুখ বিসুখ হবে, যৌতুক নেয়া যাবে না।’নিরক্ষর এই মানুষগুলোকে অক্ষর জ্ঞান দেয়ার উদ্দেশ্যে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ বলে জানালেন স্কুল শিক্ষক খাজা নাজিমুদ্দিন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অন্ধজনে আলোর পথ স্কুলের উদ্যোক্তা খাজা নাজিম উদ্দিন সময় সংবাদকে বলেন, ’এই সমস্ত লোক আমি যদি শিক।সা দিতে পারি, তাহলে তারা লিখতে পারবে, পড়তে পারবে, হিসাব করতে পারবে।’শিক্ষার আলো বিস্তারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ’আমি তাকে সাধুবাদ জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই খাজা নাজিমুদ্দিনকে এবং তার উদ্যোগ অব্যাহত রাখুক এবং এই উদ্যোগ ইউনিয়নের প্রতিটি প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পরুক।’প্রায় তিন মাস ধরে এখানে ৩০ জন নিরক্ষর মানুষের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার করছেন এই স্কুল শিক্ষক।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):