একজন মহানায়কের গল্প...


ইমন নাম ছেঁটে ফেলে বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামে আগমন তাঁর। তিনি এলেন, দেখলেন জয় করলেন- এই কথাটা বাংলা সিনেমার জগতে একমাত্র তাঁর সাথেই সহজে মানিয়ে যায়। কারণ সালমান রুপালি পর্দায় এসেই জয় করে নিয়েছিলেন, এখনো জয় করে চলেছেন দর্শকদের ভালোবাসা। আর তাইতো আজ ১৮ বছর পরে এসেও মানুষ এই মহানায়কের মৃত্যুর দিনটাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। মৃত্যুর পরেও তাই আজও সালমান চির অমর হয়ে রয়েছেন দর্শকদের হৃদয়ে।
বড় পর্দায় অভিনয়ে সালমানকে একজন প্রেমিক, কলেজ ছাত্র, কখনো পাগলের ভুমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে। কখনো মনে হয়নি, এখনো সেই সিনেমাগুলো দেখলে মনে হয়না তিনি অতি অভিনয় করছেন। সব চরিত্রকেই নিজের সাথে মানিয়ে নিতে পারতেন তিনি।
কী এমন জাদু ছিল যার দরুন এই অভিনেতাকে দর্শক বছরের পর বছর তাদের মনে রাজার আসনে বসিয়ে রেখেছেন? মৃত্যুর দেড়যুগ পরও জনপ্রিয়তার ভাটা পড়েনি এতোটুকু? এমন প্রশ্নের জবাবে তার আরেক সহকর্মী চিত্রনায়ক ওমর সানি জানালেন, সালমানের ভিতর কী যেন অজানা একটা ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে তার কস্টিউমের ক্ষেত্রে বরাবরই ভিন্নতা দেখেছি। যেমন মাথায় কাপর বাঁধা, কিংবা ধরুন প্যান্ট একটু নিচু করে পরা। এই সব কিছুই সালমানকে অন্যদের থেকে আলাদা করতো। আমি মনে করি প্রতিটি শিল্পীর একটা নিজস্বতা থাকা দরকার। যাতে করে মানুষ যদি রেডিওতে কথা শুনেও বুঝতে পারেন কোন শিল্পী কথা বলছেন। আমার কাছে মনে হয় সালমান সেটি করতে পেরেছিলেন। সে যুগের থেকেও এগিয়ে ছিল। তাই এযুগের নায়করাও তাকে অনুকরণ করেন।
ওমর সানি কথা ধরে বলতে গেলে, সত্যি সালমানের সেই নিজের করা স্টাইল গেঁথে ছিল তার লাখো ভক্তের হৃদয়ে। সেসময় তাকে অনুকরুণ করার চেষ্টা ছিল অনেকের মাঝেই। এছাড়াও তার সাবলীল অভিনয়ের দক্ষতার জন্য আজও বাংলা সিনেমার বর্তমান প্রজন্মের নায়করা সালমানকে তাদের আইডল মানতে দ্বিধা করেন না। এক কথায় বলা যায় তার মতো কেউ ছিলেন না, কেউ নেই, আর কেউ আসবেনও না। সালমান শাহ এর কোন বিকল্প নেই। তিনি একজন মহানায়ক হয়ে বেঁচে থাকবেন যতদিন বাংলা ছবি থাকবে, বাংলা ছবির দর্শক থাকবেন। বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের মণি কোঠায়।
সালমান শাহর অভিনীত ছবি ও ব্যাক্তি জীবনের কিছু তথ্যপ্রকৃত নাম: শাহরিয়ার চৌধূরী ইমন
চলচ্চিত্রে দেয়া নাম : সালমান শাহ
জন্ম তারিখ : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার: ১৯৯৩-১৯৯৬
অভিনীত চলচ্চিত্র : ২৭টি
নাটক: পাথর সময় (১৯৯০), ইতিকথা (১৯৯৪)।
একক নাটক: আকাশ ছোঁয়া (১৯৮৫), দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), নয়ন (১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬)।
বিজ্ঞাপন: ইস্পাহানি গোল্ডস্টার টি (১৯৮৩), জাগুয়ার কেডস (১৯৮৪), মিল্কভিটা (১৯৮৮), কোকা-কোলা (১৯৮৯), ফানটা (১৯৯১), জাগুয়ার কেডস (১৯৮৫)।
অভিনীত চলচ্চিত্র সমূহ : কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, দেন মোহর, তোমাকে চাই, বিক্ষোভ, বিচার হবে, চাওয়া থেকে পাওয়া, আনন্দ অশ্রু, আশা ভালবাসা, জীবন সংসার, মহা মিলন, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের ঠিকানা, এই ঘর এই সংসার, আঞ্জুমান, কন্ন্যাদান, মায়ের অধিকার, প্রেম যুদ্ধ, স্নেহ, সত্যের মৃত্যু নাই, সুজন সখী, তুমি আমার, প্রিয়জন, স্বপ্নের নায়ক, বুকের ভিতর আগুন, প্রেম পিয়াসী।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):